লোকটি মহাপুরুষের
মতো কথা বলছিল। তার
গলায় মালা। পোশাক
দেখলে শ্রদ্ধা আর সম্ভ্রম
জাগে। কিন্তু লোকটির
মুখ?
চোখের ভাষা? কেমন যেন
সন্দেহ হয়। মনে
হয় মুখটা যেন একজন
খুনির। চোখ দু'টো
যেন একজন উন্মাদের।
এই
লোকটি আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেন। একে আমরা সবাই
বিশ্বাস করেছিলাম। প্রায়
মাসখানেক ধরে সমুদ্রের বুকে
আমরা ভেসে চলেছি। অবশেষে
এল সেই বন্দর। এখানে
আমরা দু'দিন বিশ্রাম
নেবো।
লোকটি
বলল,
তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো ?
হ্যাঁ। আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম।
এই
বন্দরে আমি নেমে যাবো
ভেবেছিলাম।
কে
তবে জাহাজ চালাবে ?
নতুন
কোনও ক্যাপ্টেন।
না, না, আমরা
তোমাকেই চাই।
লোকটার
মুখে হাসি ফুটে উঠল। কেন জানি, সেই হাসি
আমার ভালো লাগল না। কেমন যেন ক্রুরতা আছে
সেই হাসির মধ্যে।
বন্দর
থেকে সোজা গেলাম একটি
সরাইখানায়। সেখানে এক
পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে আমার
দেখা হয়ে গেল। আমাদের
জাহাজের অনেকেই এসেছিল। ক্যাপ্টেনও
ছিল তাদের মধ্যে।
ক্যাপ্টেনকে
দেখে আমার সেই পুরোনো
বন্ধু কেন জানি চমকে
উঠল। তারপর জানতে
চাইল, ও কে রে ? ওই যে
ওই লোকটি?
ও তো
আমাদের জাহাজের ক্যাপ্টেন !
সর্বনাশ ! বন্ধুটি
শিউরে উঠল। বলল, তো
তোদের খুব বিপদ!
কেন ? লোকটি
তো খুব ভালো। আমাদের সঙ্গে ব্যবহারও
খুব বন্ধুত্বপূর্ণ। আর
বিশ্বাসযোগ্যও বটে ...
শোন, বন্ধুটি
কেমন যেন সাবধানী গলায়
বলল,
তুই বা তোরা লোক
চিনিস না। আমি
একে খুব ভালো করেই
চিনি। এই লোকটি
আমাদের গ্রামের মোড়লের ছেলে।
আমার
কৌতূহল হল। বন্ধুটি
বলে চলল, এই লোকটি
আসলে একজন খুনি ও উন্মাদ। খুব ছোটবেলা থেকেই ওর
জাহাজ চালানোর শখ। আর
প্রথমবার জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়েই
ও সেই জাহাজে রীতিমতো গণহত্যা
চালায়। জাহাজটি ফিরে
আসে পচা, দলাপাকানো, সারি সারি
ডেড বডি নিয়ে।
কিন্তু
কেন
?
ক্ষমতার
লোভ। লোকটা সবাইকে
দেখাতে চেয়েছিল ওর কী
ক্ষমতা ! তাছাড়া লোকটার মধ্যে
রয়েছে প্রচণ্ড ঘৃণা। আর
সে দারুণ প্রতিহিংসাপরায়ণ। সুযোগ
পেয়ে তারই শোধ তোলে
সে। লোকটার কোনো
শাস্তি হয়নি ?
নাঃ! বরং
বন্দর কর্তৃপক্ষ তাকে ফুলের
মালা আর সোনার পদক
দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। হঠাৎ
করেই লোকটি হয়ে ওঠে
দারুণ জনপ্রিয়। বন্দর
কর্তৃপক্ষ জানায়, লোকটি যতদিন
ইচ্ছা যে কোনও জাহাজের
ক্যাপ্টেন হিসাবে কাজ করতে
পারে ...
কিন্তু
কেন?
আশ্চর্য হয়ে আমি জানতে
চাইলাম।
কারণ
লোকটির প্রচণ্ড প্রতাপ আর
ঘৃণা করার ক্ষমতা সবাইকে
বিস্মিত করেছিল। তারা
মনে করেছিল, ক্যাপ্টেন হওয়ার
জন্য ও-ই হবে
উপযুক্ত লোক!
সত্যিই
আমাদের ক্যাপ্টেনের কর্তৃত্ব
করার ক্ষমতা রয়েছে। আর
রয়েছে নিজেকে জাহির করার
ইচ্ছা। কিন্তু একমাস
তো আমরা বেশ শান্তিতেই
ছিলাম। কিছু তো
মনে হয়নি ...
এবার
হবে। বন্ধুটি বলল। এবার তোরা যাচ্ছিস তিনমাসের
জন্য। এবার বুঝবি, লোকটা
আসলে কে ! সবাই ওকে
শিরোপা দিয়ে জাহাজের ক্যাপ্টেন
করে রেখেছে। ও বুঝে
গেছে, সিংহাসনে টিকে থাকারউপায়
একটাই। রক্তপাত। ও যতো
রক্তপাত ঘটাবে, লোকে ততো
ওকে ভক্তি করবে।
বন্ধুটির
কথায় আমি পুরোপুরি বিশ্বাস
করেছিলাম, তা নয়। কিন্তু
একটা সন্দেহ আমার ভেতর
ঢুকে গেছিল। আর
সেটা হয়েছিল, কারণ, গোড়া থেকেই
আমার নিজেরও একটা আশঙ্কা
ছিল
!
আর
সত্যিই এবার জাহাজ ছাড়ার
পর থেকেই একটার পর
একটা অঘটন ঘটে চলেছিল। একটার পর একটা মানুষ
খুন হচ্ছিল। রক্তের
দাগ মুছে মুছেও শেষ
করতে পারছিলাম না। গোটা
জাহাজে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস
করতে পারছিলাম না। এক
অদৃশ্য খুনির আশঙ্কায় আমাদের
চোখের ঘুম উধাও হয়ে
গিয়েছিল।
একদিন
আমার কাছেও সে এল। সেই অদৃশ্য হত্যাকারী। আর
সেদিন তাকে আমি স্পষ্ট
করে চিনলাম।
তাকে আমি
বললাম, তাহলে একদিন না
একদিন খুনি আর উন্মাদের
মুখোশ খুলে পড়েই ...
লোকটি
ভয়ঙ্করভাবে হেসে উঠল।
হাড়
হিম হয়ে গেল আমার। সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। বললাম, কেন
তুমি আমাকে হত্যা করতে
চাও?
আমি তোমার কোন ক্ষতি
করেছি ?
তুমি
আমার শত্রু। সে
গর্জন করে উঠল।
আমি
বললাম, কিন্তু তোমাকে তো
আমি চিনতামই না। শত্রুতার
তো কোনও প্রশ্নই ওঠে
না এখানে ...
লোকটি আবার
বিকটভাবে হেসে উঠল। তারপর
বলল,
তোমার সঙ্গে আমার চোদ্দ
পুরুষের শত্রুতা। তুমি
যে গ্রাম থেকে এসেছো
...
লোকটার
হাতের ছুরিটা জানলা দিয়ে
আসা জ্যোৎস্নার আলোয়
ঝকমক করছিল। ও নিশ্চয়
অন্যদের যেভাবে হত্যা করেছে, সেভাবেই
আমারও গলার নলি কেটে ...
কিন্তু
আমারও যে একটা কর্তব্য
আছে। এই লোকটাকে
চিনিয়ে দেওয়া দরকার। নইলে
যে একজন হত্যাকারীকে কেউ
চিনবে না। একজন
নিষ্পাপ জাহাজের ক্যাপ্টেন বলেই
ভাববে।
আমি
তৈরিই ছিলাম। শক্ত
করে চেপে ধরলাম আমার
প্যান্টের পকেটে রাখা রিভলভারটিকে...
ভালো লাগলো
ReplyDeleteক্যাপ্টেন-'০২।
ReplyDeleteঅন্তহীন ধন্যবাদ লেখকে,তাঁর কেপ্টেনের সংবাদটি বলবার জন্য।
খুব ভালো হয়েছে
ReplyDelete