বাক্‌ ১৪২ ।। Look back in anger / John Osborne : মান্টি অধিকারী দত্ত



পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষ হলেও মানুষ এমন এক বিশ্বে বসবাস করে যেখানে সে তার নিজের  জন্ম মৃত্যুর  সাথে  তার অতীত বর্তমান বা ভবিষ্যত ইত্যাদিকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বা রাখতে পারেনা ।
উপযুক্ত  যোগ্যতা থাকতেও এক দুর্বোধ্য যুক্তিহীনতা ভাগ্যের নানান পরিহাস মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। পেয়েও না পাওয়ার যে এক অদৃশ্য যন্ত্রণা তা সে অনায়াসে উগরে দেয় তার একান্ত কাছের মানুষদের উপর।
আজ যে বইটিকে নিয়ে আলোচনা করবো সেটিতে নাট্যকার  John Osborne -এর লেখা look back  in anger নামক একটি ইংরেজি নাটক ।
তিন অঙ্কের এই নাটকটি বাস্তবধর্মী নাটক (realism theatre)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী কালে সমাজের যে অর্থনৈতিক দূরাবস্থার তা এই নাটকে চরিত্রগুলো বিশ্লষণ করলে সহজেই ধরা পড়ে।

নাটকের প্রধান চরিত্র Jimmy Poter
যথেষ্ট  উচ্চশিক্ষিত তবুও নিম্ম মধ্যবিত্ত ও শ্রেণীবৈষম্যের শিকার এই যুবকের বিবাহ হয় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে মেয়ে Alison Poter এর সাথে। পিতা  Colonel Redfern -এর আপত্তি থাকা সত্তেও মেয়ে  Alison ভালোবেসে বিবাহ করে Jimmy কে কিন্তু Jimmy যেহেতু উপযুক্ত যোগ্যতা থাকাতেও তেমন কিছু করতে পারেনি  তাই তার সমস্ত রাগ সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে Alison এর উপর সর্বদা  বর্তায় শুধু তাই নয় গোটা নারী জাতির উপরেই সে ক্ষুব্ধ ।
নাটকের প্রথম অঙ্ক থেকে শেষ অঙ্ক পর্যন্ত আমার Jimmy কে একজন angry young man রূপে দেখতে পাই।
১৯৫৫ সালে লেখা নাটকটি মঞ্চস্থ হয় ১৯৫৬ সালে তবে অনেক সমালোচনার মুখোমুখি হওয়ার পর তা প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে।
শুরুতেই দেখি ইংল্যান্ডের মিডল্যান্ডের এক কামরার একটি ছোট্ট ফ্লাট সেখানে  Jimmy ও তার স্ত্রী Alison এবং  Jimmy -র এক বন্ধু Cliff Lewis একই সাথে বসবাস করেন। Cliff Jimmy দুইজনেই শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ । রবিবার সকাল দুই বন্ধু পেপার পড়ছে এবং Alison জামা কাপড় একটি বোর্ডে আয়রন করছে ।
প্রথম অঙ্কেই Jimmy -র সাথে Alison- এর সাথে ঝগড়া শুরু হয়ে যায় এবং Alison -এর হাত পুড়ে গেলে Jimmy ক্ষমা চেয়ে রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে Cliff
Alison এর হাত ব্যান্ডেজ করতে গিয়ে জানতে পারে Alison অন্তঃসত্ত্বা কিন্তু সে সেই কথা Jimmy কে বলেনি। Cliff Alison কে আশ্বস্ত করে এবং তাকে চুম্বন করে এমতাবস্থায়
  Jimmy ঘরে চলে আসে কিন্তু সে কিছু বলেনা।
এই দৃশ্যটি দর্শকদের কাছে আশ্চর্যের হলেও এখন থেকে সমসাময়িক শ্রেণী বৈষম্য একটা দিক উঠে আসে ।

এই সময় অন্য আরেকটি চরিত্রের আগমন ঘটে Helena  Charles এই চরিত্রটি Alison এর বান্ধবী যে কিছু দিনের Alison এর কাছে থাকতে আসে যেটা Jimmy ভীষণই অপছন্দের এবং Helena তার বান্ধবীর অবস্থা দেখে বান্ধবীর পিতা Colonel Redfern কে খবর দেয়।
এরই মধ্যে Helena ঠিক করে তারা চার্চে যাবে কিন্তু খবর আসে Jimmy -র ছোট বেলার বন্ধুর মা অসুস্থ যে বন্ধু তাদের বিয়ের পর Jimmy Alison-কে ভীষণ ভাবে সাহায্য করেছিলো।
কিন্তু Alison সেখানে না গিয়ে Helena -র সাথে চার্চে চলে যায় চার্চ থেকে ফিরে এসে Alison দেখে তার বাবা তাকে নিতে এসেছেন।  Alison , Cliff এর কাছে একটি চিঠি দিয়ে পিতার সাথে চলে গেলে, Jimmy ফিরে এসে Alison কে না দেখতে পেয়ে Helena কাছ থেকে তার চিঠি পায় এবং  জানতে পারে Alison অন্তঃসত্ত্বা ছিলো। Jimmy এই ঘটনাতে খুশি নাহয়ে রেগে গিয়ে  Helena সহ উচ্চশ্রেণীর বা সম্ভ্রান্ত শ্রেনীর সকলকে নানা গালিগালাজ করে । Helena এই সব কিছু সহ্য করতে পারে না এবং সে Jimmy কে  একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। দ্বিতীয় অঙ্ক শেষে আমরা দেখি নীরব Jimmy Helena একে অপরের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
এরপরের দৃশ্যে আমরা দেখি ঠিক প্রথম দৃশ্যের মতো আবারও  Alison এর জায়গায় Helena কাপড় আয়রন করে।
Cliff চলে গেলে Helena
  Jimmy- কে প্রেমপ্রস্তাব দেয় আর  সেই মূহুর্তে দরজায় এসে দাঁড়ায় Alison. বিষন্ন , শীর্ণ Alison কে দেখে Helena তার ভুল বুঝতে পারে এবং সে Alison-এর কাছে ক্ষমা চেয়ে  চলে যেতে চায়। এই সময়েও  Jimmy -র মধ্যে আমরা দেখতে পাই Helena প্রতি (Misogyny) নারীবিদ্বেষ।
সর্বোপরি Alison জানায় তাদের সন্তানটিকে সে পৃথিবীতে আনতে পারেনি এবং এই বলে সে Jimmy -র কাছে মাথা নতজানু হয়। Jimmy-ও যাকে আমরা গোটা নাটকে দেখতে পাই angry young man সেও কষ্টে ভেঙে পড়ে এবং শেষমেশ তাদের সম্পর্ক পুনরায় সুন্দর হয়ে ওঠে ।
এই নাটকে নাট্যকার John Osborne-এর  ইংল্যান্ডের Derby শহরে থাকাকালীন প্রথম স্ত্রী Pamela Lane সাথে অসুখি বৈবাহিক জীবনযাপন, খুব ছোট বয়সে পিতাকে হারানোর পর জীবনসংগ্রাম এবং  ১৯১৪ থেকে ১৯৬০ সালের পর্যন্ত পৃথিবী নানান বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে আর্থসামাজিক সংকটের প্রভাব ব্যক্তিজীবনের চরম হতাশা ও সেই হতাশা থেকে থেকে উঠে আসা চরম ক্ষোভ ব্যক্ত করেন।

এই নাটকটি নাট্যকারকে নাট্যজগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র স্থানাধিকারী করে তুলেছে। তিনি দর্শক ও পাঠকমনে সদা বিরাজ করবেন।


9 comments:

  1. ভালো লিখেছ তবে আরও গভীরে প্রবেশ করতে হত। আরও লেখো এরকম বই নিয়ে।

    ReplyDelete
  2. ভালো লাগল। নাটক বিষয়ে আরো লেখা পড়তে চাই।
    বানান ভুল থেকে গেছে কিছু।
    নমস্কার নেবেন আমার।

    ReplyDelete
  3. পড়লাম।নাটকটা পড়তে ইচ্ছে করছে। ভালো অনুধাবন করেছেন

    ReplyDelete
  4. মান্টি খুব ভালো।। উৎসাহিত হলাম

    ReplyDelete