বাক্‌ ১৪২ ।। গুলজারের দুটি অত্যাশ্চর্য কবিতার অনুবাদ: অর্ঘ্য দত্ত




বাংলার দুই অতি বিখ্যাত কবিকে নিয়ে গুলজারের লেখা দুটি কবিতা। কবিতা দুটি কবিতা হিসেবে কেমন, সে বিচারের চেয়েও আমার কাছে যা ইন্টারেস্টিং লেগেছে, আমাকে যা অবাক করেছে  তা হলো গুলজারের মতো একজন বাণিজ্যিক সফল, সর্বভারতীয় ভাবে বিখ্যাত, হিন্দি-উর্দু কবির  অন্য ভাষার পূর্বসূরিদের প্রতি এই কৃতজ্ঞতাবোধ, তাঁর এই শিকড়-সংলগ্নতা‌। অর্ঘ্য দত্ত


ঠাকুর (ট্যাগোর)

একজন গেঁয়ো মাথায় পাটালির চাঙাড়ি নিয়ে
হেঁটে যাচ্ছিল  দিগন্ত বিস্তৃত এক মাঠের মধ্যে দিয়ে 
গুড়ের সুগন্ধে দলবেঁধে ভনভন করে
মাথার ওপরে ছাতার মতো  ঘুরছিল মাছি
রোদ চড়ছিল, বাড়ছিল সূর্যের তাপ
ঘেমে উঠছিল থরে থরে সাজানো পাটালি

হয়রান সেই আনাড়ি গাঁইয়ার
মাথা থেকে চুঁইয়ে পড়ছিল মিষ্টির ফোঁটা
আর জিভ দিয়ে চেটে নিচ্ছিল সে!

আমি গেঁয়ো
আমার মাথার 'পরে কে  রেখে দিয়েছে
এই চাঙাড়ি ভরা রবিঠাকুরের কবিতা!


মনে পড়ে, জীবনানন্দ

যখন সে ডেকেছিল, তখন তন্দ্রামগ্ন ছিলাম
বোধহয় চলন্ত ট্রাম থেকে  লাফ দিয়ে নেমে পড়েছিল, আর...

আর, ঝিলের জলে গিয়ে পড়েছিল তার পা
রাজহাঁস নিজের পাখনা দুটি মেলে 
সাঁইসাঁই করে উড়ে গিয়েছিল দূরে
ডানা থেকে সোনালী রোদের গন্ধ মুছে ফেলে
চিল ফিরে এসেছিল নিজের বাসায়!

আমি তন্দ্রায় আচ্ছন্ন...
ধোঁয়া ধোঁয়া শীতের কুয়াশা মাখা সন্ধ্যার ব্যস্ততা
ভেদ করে চলে যাচ্ছে ট্রামের লাইন
তার লোহার পাতে লাগা রক্তের ঝিলিক
এবং বাংলা কবিতা পড়তে পড়তে
দু'লাইনের মধ্যে দিয়ে কে যেন হেঁটে আসে
"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে"
মেঘে ঢাকা তার মুখখানা
কিন্তু দেখা যাচ্ছে শুধু অন্ধকার কালো দুটি চোখ
মনে পড়ে নাটোরের বনলতা সেন...!

18 comments:

  1. প্রথমেরটা বেশ ভালো । একদিন ইউটিউবে ওঁর মুখে রবীন্দ্র কবিতার উর্দু অনুবাদ শুনছিলাম । অসাধারণ ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত31 May 2020 at 04:10

      ধন্যবাদ।

      Delete
  2. অর্ঘ্যদা❤। আহা। অনুবাদেও গুলজার কে স্বাভাবিক লাগলো।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত31 May 2020 at 04:11

      ধন্যবাদ।

      Delete
  3. উত্তম বিশ্বাস31 May 2020 at 03:53

    দারুণ একখান কাজ করলেন দাদাভাই!
    গুলজারজীকে আমার শ্রদ্ধা!

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত31 May 2020 at 04:13

      শুভেচ্ছা।

      Delete
  4. রবীন্দ্রনাথ এক চাঙড় ভরা পাটালী গুড়। সুন্দর লেখা।আর জীবনানন্দের বিভিন্ন লাইন ছুয়ে, তাঁর মৃত্যু ছুয়ে স্মরণ চমৎকার!

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত31 May 2020 at 04:16

      অশেষ ধন্যবাদ।

      Delete
  5. খুব সুন্দর কবিতা। অনুবাদ এক বিরাট দায়িত্ব। এখানে তা যথাযথ পালিত হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত14 June 2020 at 10:35

      অনেক ধন্যবাদ।

      Delete
    2. অর্ঘ্য দত্ত14 June 2020 at 10:37

      অশেষ ধন্যবাদ।

      Delete
  6. খুব সুন্দর অনুবাদ। প্রথম কবিতাটি বেশি ভালো লাগল।

    ReplyDelete
  7. Osadharon...Khub bhalo laglo Amar priyo kobi GULZAR JI - r Kobita Sathe Arghya Dutta ji - r Anubaad.....Ek kothay MON BHORE GELO...

    ReplyDelete
  8. কবিতা অনুবাদ বেশ শক্ত একটা কাজ।একটু এদিক ওদিক হলেই আড়ষ্টতা এসে যেতে পারে। কিন্তু এই কাজটিতে কোথাও অনুবাদের দূরত্ব নেই।মনে হচ্ছে কবেই বলছেন।অনুবাদক আর কবি একাত্মা। প্রথম কবিতার আইডিয়াটা ভীষণ ভীষণ ভালো লাগলো। প্রতিটা লাইনেই আসলে শল্কউন্মোচনের অনুভূতি পেলাম।দ্বিতীয়টি তুলনায় একটু অবভিয়াস টাইপ।তবে বলাই বাহুল্য সে ব্যাপারে অনুবাদকের তেমন একটা কিছু করার থাকেনা।অন্তহীন শুভেচ্ছা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত14 June 2020 at 10:34

      ধন্যবাদ।

      Delete
  9. এক কথায় অনবদ্য সৃষ্টি। কলমের মুন্সীয়ানা লেখা দুটিতে অন্য মাত্রা দিয়েছে। যেহেতু আমি অনুবাদের চেয়ে ভাবানুবাদে প্রাধান্য দিই তাই কবির ভাবনাকে আরেক জন কবি শিল্পীত করেছেন তার বোধ দিয়ে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অর্ঘ্য দত্ত6 June 2020 at 03:25

      অনেক ধন্যবাদ।

      Delete