বাক্‌ ১৪২ ।। কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায় ।। কনচের্টো

আমার ও আমাদের মৃতদেহ ততক্ষণে গ্রামের গঞ্জে পৌঁছে গেছে... একটা অশ্বক্ষুরাকৃতি নথ পরা যুবতী বালক যেই দিকে পথ ধরাচূড়া মেখে বেঁকে গেছে, তার পাশে যোনি বিকোচ্ছিল সাজিয়ে৷ প্রতিটা মরার লিঙ্গ কেটে নিয়ে বনস্থলীতে আজ নিকানো উৎসব৷ হাটবারে মিলনের মেলা বসেছে৷ যত পার লুঠে নাও৷ আকাশ আবির ধারণ করে এদিন, নাঙ্গা শরীরে ভূমি উঠে আসে৷ ধুলোট ধুলোময়৷ মৃতদেহগুলো হাটে পৌঁছে গেলেও আমার মরায় এখনও পিঁপড়ে দানা বাঁধেনি৷ নিভু নিভু ধুনিকেন্দ্র থেকে কিছুটা স্থিতধী ছাই তুলে জল থুপে থুপে কাদা ফ্যানাচ্ছে মোড়লের দল৷ বডিগুলো নিয়ে আজ নাচ লাগবে তারপর প্রতিটা শরীর থেকে কর্তন করে ফালুসগাছ ঝুলিয়ে দেওয়া হবে মদেসীয়া যুবতীদের গলায়৷ কইমাছের দরে যোনি উঠে যাচ্ছে হাতে হাতে৷  বেশিরভাগ কিনে নিচ্ছে পুরুষ ও বুড়োরা৷ সন্ধে নামলেই এসে পড়বে লতাগুল্ম, আসবে তাল তমাল গেওয়া, গোটা সুন্দরবন গালিচা পেতে হাজিরা দেবে কোমরে কোমরে৷ মেয়েদের একদিকে জমায়েত, পুরুষদের অন্যখানে৷ ইস্পাতের খাঁচা খুলে রেখেছে মেয়েরা হ্রদধারে সারসার৷ তার আগে কতকটা জলনিষেক, তালস্নান৷ আমার নিস্পন্দ মণি কেউ পেরেকে পুঁতে দিয়েছে৷ একটু আগে কোনও এক মোড়ল এসেছিল৷ আমার বজ্ররোম খাপিয়ে নিয়ে গেছে ক্ষুরে৷ ওদিয়ে নাকি ভল্লমের ফলা বাঁধা হবে৷ দুপুরে শূকরের মাংস দিয়ে আহার সেরেছে অংশগ্রহণকারীরা৷ সময় সময় স্নানরত মেয়েদের কোমরজলে তাই বুদবুদ উঠছে খালি৷ ইস্পাতের খাঁচাগুলো থাকায় কতদিন তারা কটিদাঁড়া বাড়ি খায়নি, খায়নি পুরুষ গ্রিজের অয়েলিং৷ ধর্ষণ থেকে বাঁচার জন্য এই খাঁচাগুলো বেশ কাজে দিয়েছে এতদিন৷ দুই বছর টানা যৌন উপবাস টিকিয়ে রাখার দাবিতেই এখানকার মেয়েরা আমার কামারশালে এসে কোমর মাপে বানিয়েছিল এই লৌহবাগিচা৷ আমি ও আমার কর্মীরা যত্নে বানিয়েছিলাম খাঁচাগুলো, আয়তনেত্র রোধে৷ সেই আমাদেরকেই ওরা শেষে দেবতা বানাতে হত্যা করলো... 

মাঠের একদিকে ছেলেরা মদ ও শূয়োর খাচ্ছে বসে, এর আগে মুলতানি মাটি ও দুব্বো নিজেদের গায়ে মাখিয়ে নিয়েছে ওরা৷ ঘাম চামড়ার মাংসল মেয়েগুলো যখন ধেয়ে আসবে ওদের দিকে, তখন প্রস্তুত হতে হবে উপবাস ভাঙনে, তালা ছিঁড়ে এক একটা দ্বারে উগড়াবে ধ্বকে ধ্বকে গ্লেসিয়ার৷ আমার দেহে পিঁপড়ে ধরেছে এতক্ষণে, জোছনার সফেন ফেনা মৃতগুলোর ওপর উপচে পরছে৷ বিদীর্ণ এক দ্রুম্ দ্রুম্ ধ্বনি৷ উৎসব বিবরণী নিখাদ গাম্ভীর্যে গলায় ফুটিয়ে তোলে এক বামন— রমণের সময় খেয়ালে রাখবে মাটি ও বৃক্ষ, আঁচ না পরে যাতে দেওতার খোলে৷ দেওকে ছুঁয়ে নেবে আগে সকলে, স্পর্শিবে লম্ব, তারপর মিলন৷ মনে থাকে যেন, বরফ নিক্ষেপ কুয়ার আঁধারে পনের মিনিট, তারপর মেয়েরা পরবে  খাঁচা, পুরুষরা জলে নেমে ধুয়ে নিও প্রবল শ্বাসাঘাত৷ এই অভিযানে আমরা বেছে দেব বন্ধ্যা সঙ্গীকে, যার ফলে ভয় নেই, গর্ভ হবে না কোনও বিশল্যকরণীর৷ 

উল্লাসে ফেটে পরে মাঠ৷ জল ছেড়ে মেয়েরা হস্তি কাঁপনে উঠে আসে৷ মাটি কাঁপছে, দূর থেকে দেখলে মনে হয়, ভেড়ার রাং ঝুলতে ঝুলতে এগিয়ে আসছে প্রভুজাতকদের নিকট৷ নারীদের গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে মৃত দেবতাদের অঙ্কুশ৷ পুরুষেরা তলপেটে বেঁধেছে প্রাপ্ত যোনি৷ এবার চরম সংকেত... নিনাদ ওঠে——— চোদ দো... চোদ দো...চোদ দো——— উপবাসের হিরন্যময় ফল - চোদ দো৷ আমার লিঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে ভোজালির ধারে৷ পুরুষোত্তম দেবতা; কামাবসানের কামারশাল অধিপতির মিয়ানো পেশী পরিয়ে দেওয়া হয়েছে অংশ নেওয়া বুভুক্ষু, আমার সহোদরার গলায়, যাকে এতদিন কটিগরাদ না পরিয়ে বেঁধে রেখেছি ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গে৷ স্নেহ ঝলসাচ্ছে বন্ধ্যা বোনের ত্বক, যাকে বেঁচে থাকতে একবারই শরীর দিয়েছি৷ নিদারুণ পাপ, কিন্তু একই জঠর আলো, তাকে অতিমাত্রায় সুখ দেওয়া কি মানায়! 

আমাদের দেহক'টা তুলে ধরা হয়েছে পাটাতনে করে শূন্যে৷ নর নারীরা সবাই এসে পা ছুঁয়ে যাচ্ছে, আর তলপেটের খোদলে আঙুল চুবিয়ে কপালে কাটছে রক্ত৷ সব শেষে বোন এল পদতলে৷ দুই চোখের জল গাল বেয়ে মাছির এগিয়ে চলা৷ অবাক হলাম, ছুঁচ-সুতো চাইলো ও, মোড়লরা প্রথমে গররাজি হলেও, দেবতার ভগিনী বলে উপেক্ষা করতে পারে না আব্দার৷ আসে প্রয়োজনীয় সব৷ গলার থেকে ছিঁড়ে নিল বোন দড়ির গিঁট, কাঁপা মমতায় কুঁচকে যাওয়া পেশীটা বুনতে থাকে গর্তে আমার...

...খেলা শুরু হয়, সেলাই করা কলাভৃৎ আমি জ্যান্ত দেওতা মুচকি হাসছি

                          বোনের 'বনে আজ কনচের্টো'...