বাক্‌ ১৪২ ।। ইনসা মালিক ,কাশ্মীরি কবি গদ্যে : সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় ।। কবিতা অনুবাদে : সোহেল ইসলাম



ইনসা মালিক :
সংক্ষিপ্ত পরিচয় : ভারতীয় সেনাদের টহলদারি, ব্যারিকেড, তল্লাশি, কাফু, গুলির আওয়াজ, বিস্ফোরণের মধ্যেই ইনসা'র জন্ম। হাজার হাজার মানুষের চিরতরে হারিয়ে যাওয়া, খুন হয়ে যাওয়া, ধর্ষিত হবার নির্মম বাস্তবতার ভেতরেই বেড়ে উঠেছে ইনসা। ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে কাশ্মীরি জনতার সংগ্রামের কথা লেখে ইনসা। ভারতীয় সেনার ও সিস্টেমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কবিতাই এই তরুনীর লড়াইয়ের হাতিয়ার। ইনসা একই সাথে একজন কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক। তার গবেষণার বিষয় কাশ্মীরি নারীদের রাজনৈতিক অধিকার ও লিঙ্গ বৈষম্যের সংস্কৃতি।দেশীয় সংবাদমাধ্যম যেভাবে প্রতিদিন কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার হত্যানীতিকে মান্যতা দিয়ে চলেছে তার বিরুদ্ধে ইনসা'র কবিতা এক তীব্র প্রতিবাদ।






আসুন এক মিনিট নীরবতা পালন করি
সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায়


শ্রীনগরের কোনও এক অজ গ্রামের বাসিন্দা বেগম জানকে দিয়েই শুরু করা যাক। নিজের স্বামীর কথা বলতে গিয়ে বেগম জানিয়েছিলেন, আমরা তখন নুন-চা খাচ্ছিলাম,হঠাই ২৮ রাষ্ট্রীয় রাইফেলের অফিসাররা দরজা ধাক্কাতে শুরু করলো। দরজা খুলতেই আমার স্বামী মানিয়া তানচাকে ওরা টেনে-হিঁচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে গেল। সেটাই ছিল আমাদের শেষ দেখা। তারপর এক দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে সে কোথায়, কীভাবে আছে... জীবিত না মৃত কোনও কিছুরই খবর নেই।
      শ্রীনগর সীমান্তের শেখ হামজা কলোনীতে কোনোমতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা একটা চাঙড় ভাঙা বাড়িতে দিন কাটাতেন দিলশাদা তার স্বামী বশির আহমেদ শেখ ছিলেন একজন রঙ মিস্ত্রি। দিনটা ছিল ১৯৯২র ১৬জুন। অন্য দিনের মতই বশির রঙ কিনতে গিয়েছিলেন মাইসুমার বাজার থেকে। তারপর ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে বশির আর ফেরেননি। সেদিন নাকি লালচকে গুলি চলার একটা ঘটনা ঘটেছিল এবং প্রত্যক্ষদর্শীর মতে বি.এস.এফর জওয়ানরা নাকি তাকে তুলে নিয়ে গেছিল। অবশ্য বশিরের ফেরার অপেক্ষায় যে মানুষটা এতদিন দিন গুনতেন সেই দিলশাদাও চলে গেছেন ২০১৬র ৩১মার্চ।
জোনা বেগম থাকেন অনন্তনাগের একটা ছোট গ্রামে। ১৯৯২র ১২এপ্রিল, তার স্বামী মহম্মদ আবদুল্লা দারকে তুলে নিয়ে যায় ভারতীয় সেনা। কিন্তু আজও তিনি ফেরেননি। স্বামীর কথা বলতে গিয়ে জোনা জানিয়েছিলেন, অপেক্ষা করতে করতে আমি বুড়ো হয়ে গেলাম, জানি না তাকে দেখলে এখন চিনতে পারব কিনা। প্রত্যেক সময় মনে হয় এই বুঝি উনি কড়া নাড়লেন, কেউ কড়া নাড়লেই ছেলেকে জিজ্ঞেস করিদেখ না, বাবা আসলো কিনা।
        না, এবার আর শুধু অনন্তনাগের ৩৯বছরের হালেমা, হামেদা, বা পাহেলগাঁর কাছের গ্রামের অর্ধ বিধবা সাহর কথা বলব না, বরং দর্দপোরা নামে কাশ্মীরের একটা আস্ত গ্রামের কথাই শোনাই আপনাদের। শ্রীনগর থেকে ১৪০কি.মি. উত্তরে লাইন অফ কন্ট্রোলের কাছে... পাক অধিকৃত কাশ্মীরের পাশে যে গ্রামটাকে ঘিরে রয়েছে তুষার আবৃত পাহাড়, আপেল বাগান, বরফজমাট লেক, দেবদারু বন। কাশ্মীর বলতেই যে স্বর্গীয় দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে তেমনই ছবির মত গ্রাম এই দর্দপোরা। কিন্তু যারা এই গ্রামটিতে থাকেন তাদের জীবনটা এতটাই যন্ত্রণাদগ্ধ যে প্রতিনিয়ত ধোঁয়া বেরোয় ক্ষত থেকে। যে গ্রামের ১৫০'রও বেশি নারী আজ অর্ধ-বিধবা'। হ্যাঁ, কাশ্মীরে এই অর্ধ-বিধবা' নারীদের সংখ্যা কম করে ১৫০০। ও একটা কথা বলা হয়নি দর্দপোরাতে শুধু অর্ধ-বিধবা নারীরাই নন, কাশ্মীরের যে ২০০০০ বিধবা নারী রয়েছেন তাদের অনেকেই থাকেন এই দর্দপোরাতে।
যাইহোক সেইসব অর্ধ-বিধবা নারীরা কীভাবে জীবন কাটাচ্ছেন এবার সে প্রসঙ্গে আসা যাক। স্বামী নিখোঁজ হবার পর থেকে পরিবারের সমস্ত দায়ভার এসে পড়েছে এই নারীদের ওপর। সংসার চালাবার জন্য কাজের খোঁজে বাধ্য হয়ে তাদের বাইরে বেরোতে হচ্ছে, যে বাইরের পৃথিবীটা পুরোপুরি পুরুষশাসিত। যেখানে কাজ পাওয়াটা তো মোটেই সহজ নয়,তার ওপর এই মানুষগুলোর একটা বড় অংশই পড়াশুনো জানেন না। অতএব সেলাই বা বাসনমাজা,ঘরদোর পরিস্কার রাখার মত স্বল্প বেতনের কাজ ছাড়া তারা আর অন্য কোনও কাজই পান না। ফলে পরিবারগুলোর নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। আর জমানো যার যেখানে যতটুকু থাকে সবটাই খরচ হয়ে যায় জেলে আর আর্মি ক্যাম্পে ঘুরতে ঘুরতে। এখন এদের ৯৮ শতাংশের মাসিক আয়ই ৪০০০ টাকার নীচে।
পরিবারগুলোর অবস্থা জানতে আমরা বরং বেগম জানের কথা শুনি,“স্বামী যখন ছিলেন,সংসারের অভাব বুঝিনি। বাচ্চারা ইস্কুলে যেত। উনি ওদের জন্য মিষ্টি কিনে আনতেন। আর উনি নিখোঁজ হবার পর থেকে আমাদের দুবেলার খাবারই ঠিকঠাক জোটে না। যে কাজ করি তাতে দিনে ১৫০টাকার বেশি উপার্জন হয় না। ছেলেটার পড়া চালাতে পারিনি, ও এখন দিনমজুরির কাজ করে। ওর বাবা চেয়েছিল ছেলেটা পড়াশুনো করে অনেক বড় হবে, কিন্তু সবই কপাল...
সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিবারগুলোর ১লক্ষ টাকা কৃপা-অনুদান হিসেবে পাওয়ার কথা। কিন্তু সেটাও পেতে গেলে স্থানীয় কমিটির কাছ থেকে ডেথ-সার্টিফিকেট পেতে হবে। আর স্থানীয় কমিটি ডেথ-সার্টিফিকেট তখনই দেবেন, যদি নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি ৭বছর পরেও না ফেরেন। অর্থাৎ সরকারি ক্ষতিপূরণ পেতে গেলে প্রথম শর্তই হল, সাত বছরের অপেক্ষা। এবং দ্বিতীয় শর্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে জঙ্গী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত না থাকার প্রমাণ দিতে হবে। তবে এই ধরণের ক্ষতিপূরণকে সকলেই স্বামীর মৃত্যুর বিনিময়ে রক্ত মাখা টাকা হিসেবে মনে করেন। সেকারণে আর্থিক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণের এই টাকা প্রায় সকলেই প্রত্যাখ্যান করেন। তাছাড়া আরও কতভাবে যে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় তার ইয়ত্তা নেই, যেমন পেনশন, রেশনকার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নমিনি, স্বামীর সম্পত্তির হস্তান্তর সব কিছুর জন্যই ডেথ-সার্টিফিকেট প্রয়োজন,আর সেই সার্টিফিকেট পাবার জন্য যে কত কাঠখড় পোড়াতে হয় সে তো আগেই শুনলেন। এক্ষেত্রে ইসলামি আইনের ভূমিকাও যথেষ্ট জটিল। সেই আইনানুসারে, যদি একজন বিধবার সন্তান থাকে তবে তিনি স্বামীর সম্পত্তির ১/৮অংশ পাবেন, আর সন্তান না থাকলে ১/৪অংশ পাবেন। আর একজন অর্ধ-বিধবা, যতক্ষণ না তার স্বামী মৃত হিসেবে ঘোষিত হবে ততক্ষণ সে কোনও কিছুই পাবেন না। ২০১৪ সালে মুসলিম আলেমরা অবশ্য আদেশ দিয়েছেন স্বামীর নিখোঁজ হবার ৪ বছর পর অর্ধ-বিধবারা পুনরায় বিবাহ করতে পারেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে আলেমরা বড্ড দেরী করে ফেলেছেন। এ আদেশে খুব বেশি অবস্থার পরিবর্তন ঘটা সম্ভব নয়। কারণ কেউ কেউ সামাজিক কলঙ্কের ভয় পান,আর কেউ কেউ সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। দিলশাদা যখন পুর্নবিবাহকে বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করেছিলেন তখন তিনিও তার সন্তানের ভাগ্য নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন। আর তার চারপাশের মানুষজন তাকে বুঝিয়েছিলেন এই পুর্নবিবাহ যে কী মারাত্মক তা সে তার বাচ্চাদের বিয়ে দেবার সময় উপলব্ধি করতে পারবে। শ্রীনগরের এক অর্ধ-বিধবা নাসরিন, মেয়ে থাকার কারণে সে তার পুর্নবিবাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। নতুন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ছেলে আবিদের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছিল কিন্তু মেয়ে শাহনাজের ক্ষেত্রে রাজি হয়নি। ওরা এমনিতেই ওদের বাবাকে হারিয়েছে, আমি যদি আবার বিয়েটা করতাম তবে জানি না মেয়েটার কী দশা হত। অর্ধ-বিধবারা এই পুর্নবিবাহ বিষয়টি নিয়ে একটা অদ্ভুত অপরাধবোধে ভোগেন। প্রায় প্রত্যেকেই পুর্নবিবাহকে দোষের বলে মনে করেন। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে তারা ভয় পান। অর্ধ-বিধবাদের প্রতি সমাজের ভূমিকাও অনেকটা দূর থেকে সমবেদনা দেখানো দর্শকের মত। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি ক্ষেত্রে অর্থ সাহায্য করেছে বটে কিন্তু বেশির ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে সমাজের ভূমিকা খুবই সামান্য। এই সাহায্যের বিষয়ে বেগম জানর বক্তব্য হল, “আমার স্বামী নিখোঁজ হবার পর কোনও প্রতিবেশী আমাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করেনি। তবে আমার আশেপাশে কিছু যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষ থাকতেন তারা আমার বাড়ি রক্ষা করার পাশাপাশি আমাদের বেশকিছু জামাকাপড়, রেশনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন"।প্রতিবেশিদের সাহায্য করতে এগিয়ে না আসার পেছনের আরেকটা কারণ হল নিখোঁজের পরিবারকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসলে যদি তারা সেনাবাহিনীর পরবর্তী টার্গেট হয়ে যান। এক্ষেত্রে জোনার বক্তব্য হল, “আমাকে কেউ সাহায্য করেনি। আজকাল যখন কেউ আমার সাথে দেখা করতে আসে সে ভাবে আমি বোধহয় টাকা বা কিছু পেয়েছি। তারা জানে না যে আমি নিজেই কতটা ঋণগ্রস্ত
        এই যে একার জীবন, সেটা অর্ধ-বিধবাদের মনের ওপর এতটাই চাপ তৈরী করে যে সেই মানসিক আঘাতটা ধীরে ধীরে স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেশির ভাগ অর্ধ-বিধবা নারীরাই হতাশা, ভয়, পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, মানসিক অস্থিরতার মত অসুখে ভুগছেন। যেমন দিলশাদার স্বামী নিখোঁজ হবার পর শুধু সেই ট্রমায় আক্রান্ত হয়নি তার ছোট ছেলে রেয়াজেরও মানসিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়। শ্রীনগরের মনোরোগ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সাদাকত রহমানের কাছ থেকে আমরা জেনেছি, বেশিরভাগ অর্ধ-বিধবাদের মধ্যেই ওনারা অতি সংবেদনশীলতা ও হতাশার লক্ষণ দেখতে পান। ওনারা তাদের কগনিটিভ বিহেভিয়েরাল থেরাপির সাহায্যে চিকিৎসা করেন।
      আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন আমি কেন কাশ্মীরের বিধবা, অর্ধ-বিধবা নারীদের নিয়ে কথা শুরু করলাম। আসলে ভারতের রাষ্ট্রনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, দমননীতি, আগ্রাসন, দখলদারি, সামরিক সক্রিয়তা, যুদ্ধ যুদ্ধ নাটক, টর্চার, হত্যানীতি, লাশ লোপাট, ইত্যাদি... কাশ্মীরের নারীদের ওপর কতভাবে যে প্রভাব ফেলেছে সেটাই বলে বোঝাতে চাই আপনাদের। শুধু প্রভাব ফেলেছে বললে সম্পূর্ণ হবে না, বরং বলা দরকার এই কাশ্মীর সমস্যা নতুন করে এমন কতগুলো সমাজতাত্ত্বিক বিষয়ের জন্ম দিয়েছে যার খোঁজ কাশ্মীর ছাড়া বিশ্বের অন্যত্র মেলা সম্ভবই নয়। আর সেইসব বিষয় জন্ম দিয়েছে নতুন নতুন পরিভাষার, নতুন নতুন সঙ্কটের। যার মোকাবিলা করবার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক বা কোনও অর্থনৈতিক সমাধান সূত্রের সন্ধান মেলেনি। আর ঠিক তেমনি একটি সমস্যা হল এই অর্ধ-বিধবা বিষয়টি, যা একমাত্র কাশ্মীরি নারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ একটি সমস্যা।
                                                                     
     বর্তমানে শোকার্ত মায়েদের শোকজ্ঞাপনের সংস্কৃতি কাশ্মীরের মুসলিম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এক নতুন প্রতীক হিসেবে সামনে এসেছে। কাশ্মীরের শোকার্ত ও শহীদের মায়েরা আজাদির জাতীয়তাবাদী ধারণার এক শক্তিশালী নান্দনিক সম্পদ হয়ে উঠেছে। কাশ্মীরে শোকের সংস্কৃতির যে রূপান্তর দেখা যাচ্ছে সেখানে লক্ষণীয় হল মায়েরা অন্যের দুখঃকে নিজের করে নিচ্ছেন। আর এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। বুরহান ওয়ানির দল হিজবুল মুজাহিদিনের সাথে জড়িত আরেক মিলিটেন্ট সাবজার ভাটের জানাজাতে। সাবজার তার সাহস আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য তার গ্রাম রথসুনে যথেষ্ট জনপ্রিয়। সে পাশের গ্রামে আরেক ১৬ বছর কিশোর ফয়জান ভাটের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা যায়। ফয়জন ত্রালেতে সফলভাবে সি.আর.পি.এফর এক জওয়ানের কাছ থেকে রাইফেল ছিনতাই করেছিল। যাইহোক যে কথা বলার জন্য সাবজারের প্রসঙ্গ ওঠালাম সেটা হল সাবজারের দেহ যখন তার বাড়িতে আসে তখন হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ সাবজারকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন, কিন্তু সাবজারের মা এত মানুষ দেখেও একবারের জন্য ভেঙে পড়েননি, কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তাছাড়া অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি তাঁর ছেলের দেহটিকে সাধারণের দৃষ্টিগোচর থেকে দুরে নিজের কোয়ার্টারে নিয়ে গিয়ে শোকজ্ঞাপন করেন এবং পরদিন সকালে তিনি তাঁর স্বামীকে জানান ছেলেকে কবর দেবার সময় হয়েছে। সাবজারের মায়ের ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অনেক মায়েরাই তাদের মিলিটেন্ট ছেলের মৃত্যুতে এমনই প্রতিক্রিয়া দেখান। শোকার্ত মায়ের এই ছবিটা আরও জটিল হয়ে যায় যখন আমরা দেখি দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার একটি গ্রামে যেখানে মিলিটেন্টদের আধিপত্য রয়েছে একটি বাড়ির ছাদে একদল পুরুষের সাথে কাশ্মীরি গাউন পরা এক নারী কালশনিকভ রাইফেলের ট্রিগার টিপে আকাশের দিকে গুলি ছুঁড়ছেন আর সে রাইফেলটা ধরে রয়েছেন অন্য এক পুরুষ। আর একদল মানুষ তাকে ঘিরে হৈ হৈ করে আনন্দ প্রকাশ করছেন। সম্ভবত সেই নারীটি ছিলেন মিলিটেন্ট সাদ্দাম পাদেরের মা। সাদ্দাম ছিলেন বুরহান ওয়ানির দলেরই এক সদস্য যাকে ২০১৮র ৬মে অন্য ৫ মিলিটেন্টের সঙ্গে ভারতীয় সেনা হত্যা করে। কিন্তু এই হত্যা কাশ্মীরের মানুষের কাছে আত্মবলিদানের রূপ নিয়েছে এবং এক নতুন ধর্মযুদ্ধের জন্ম দিয়েছে। মিলিটেন্টদের কবরগুলোকে কাশ্মীরের মানুষ মাজার হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। এবং এই যে একজন মায়ের বন্দুক তুলে ধরা, এটা তো আসলে শহীদ হবার জন্য এক ধরণের উৎসাহ বা সমর্থন জানানো, কাশ্মীরে জিহাদের সংস্কৃতির এক নতুন চালিকা শক্তি হয়ে উঠছে। সাদ্দামর মৃত্যুর পর তার মা ফিরোজা জানিয়েছিলেন, “আমি যখন অন্য যোদ্ধাদের জানাজাতে গিয়েছি তখন আমার হৃদয় কেঁদে উঠেছে কিন্তু আমার সন্তান যখন শহীদ হয় আমার মধ্যে তখন এক গভীর প্রশান্তি অনুভব করি, কারণ আমি জানতাম সে ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সে নিজেকে আল্লার কাছে সমর্পন করেছে। আমার যদি আরও দুই সন্তান থাকত তবে তাদেরকেও আমি জেহাদের জন্য উৎসর্গ করতাম। জুলুম যেখানে পৌঁছেছে তাতে আমরা মায়েরাও আগামীতে বন্দুক তুলে নিতে বাধ্য হব ফিরোজা আরও বলেন,"সারা বিশ্বে এখন আমাদের চেনে,আমার সন্তান যদি এই আত্মবলিদান না দিত তবে কি সেটা সম্ভব হত ? তাদের মুক্তির জন্য আমরা যারা আত্মত্যাগ করেছি,তাদের মা হবার জন্য আমরা গর্বিত"।
        এক্ষেত্রে মুবেনার কথাও আপনাদের জানা খুব দরকার। মুবেনা হল ১৬ বছরের আরেক নিহত মিলিটেন্টের মা,যে সাদ্দামের আত্মবলিদানের জন্য তার মা ফিরোজাকে বাড়িতে এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেছেন।মুবেনা বলেছেন,"আমি হতাশ হই না,আমার জন্য জন্নত নিশ্চিত করেছে আমার সন্তান।আমি শোক করি না,বরং শক্তি খুঁজে পাই"।পাশের জেলার আরেক মা তার ছেলে সমীর টিগার জন্য সমান ভাবে গর্বিত,তিনি তার সন্তানকে 'আল্লার পুত্র' বলে সম্বোধন করেছেন।"সমীর ছিল আল্লার আমানত।সে নিজের বলিদানের জন্য মগ্ন ছিল।সে যে স্বপ্ন সফল করেছে তা আমাদের জন্য গর্বের"।সমীরের ১৩ বছরের বোন শাইসতা এবং তার ঠাকুমা একই মত পোষণ করেছে।শ্রীনগরের অন্য আরেক এলাকার মা হাজিরা বানো তার পুত্র মুগিজ আহমেদ মীরের মিলিটেন্ট হয়ে যাওয়াটাকে ন্যায়সঙ্গত মনে করেন।হাজিরার বক্তব্য হল কাশ্মীরে জুলুম নতুন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে,যেখানে মিলিটেন্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক।আশ্চর্যের বিষয় হল প্রতিটি ঘটনার মধ্যে দিয়েই আমরা এমন এক মাতৃজাতির উত্থান দেখতে পাচ্ছি যারা কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য নিজের সন্তানের বলিদানকে গর্বের সঙ্গে গ্রহণ করছে।এবং একে অন্যকে এক উচ্চতর সামাজিক মর্যাদায় ভূষিত করছে।যা সত্যিই বিরল।যে দৃষ্টান্ত পৃথিবীর অন্যত্র মেলা ভার।
       বুরহান ওয়ানির মা মাইমুনার এক সাক্ষাৎকারে আমরা দেখি এমন এক নারীকে যে প্রকাশ্যে তার যন্ত্রণাকে প্রকাশ করে না। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে তাঁর দুই সন্তানের মধ্যেই যে মানবতা ছিল তা স্বীকার করেন এবং বলেন দুজনকেই ভারতীয় সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। একইভাবে ফাইজানের মাকেও আমরা দেখি তিনি তাঁর মানসিক আঘাতকে কীভাবে নিজের ভেতর লুকিয়ে রেখেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন ছেলের মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই তারা ছেলের বই এবং স্কুলের ইউনিফর্মগুলো দান করে দেবার কথা ভেবেছেন কারণ তিনি নিশ্চিত ছিলেন, ছেলে আর ফিরে আসবে না। সংবাদ মাধ্যম অবশ্য মিলিটেন্টদের মায়েদের যে সাধারণ ছবি, তার থেকে দূরে সরিয়ে রেখে অনেক বেশি কঠোর হিসেবে তাদেরকে প্রজেক্ট করার চেষ্টা করে। কাশ্মীরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কঠিন কঠিন প্রশ্ন করে এবং তাদের সন্তানদের জীবনকে যেনতেন প্রকারেণ রাজনৈতিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করে। তবে শোক প্রকাশের যে প্রথা তাতে পরিবর্তন আনার সাথে সাথে দুঃখকে গোপন করবার মধ্যে দিয়ে কাশ্মীরি নারীরা একটা মৌলিক কাঠামোতেই বদল এনেছেন, যা কম বয়সী নারীদের আরো সাহসী করে তুলবে। কাশ্মীরে সমসাময়িক রাজনীতিতে শোকের এই যে প্রকাশ তা কাশ্মীরে নারীর প্রতিরোধের দীর্ঘ ইতিহাসের মধ্যেই নিহিত রয়েছে।পাশাপাশি নিজের সন্তানের শহীদ হওয়া আল্লাকে সমর্পন হিসেবে দেখবার মধ্যে দিয়ে শুধু যে ধর্মীয় ধারণার সক্রিয়তার প্রকাশ ঘটছে তা নয়,একটু গভীর ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ,কাশ্মীরি জনগোষ্ঠীর মূল পরিচয় বহনকারী হিসেবে মর্যাদাবোধ এবং অপমানবোধ দুই কাজ করেছে।সবচেয়ে বড় কথা কাশ্মীরের নারীসমাজ তাদের সন্তানদের এই শহীদ হওয়াকে ন্যায়সঙ্গত কাজ হিসেবেই মান্যতা দিচ্ছে।
                                           
        এবার আসা যাক কাশ্মীরের নারীদের সরাসরি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে।স্বাধীনতার জন্য বিক্ষোভে এতদিন পুরুষদের যে আধিপত্য ছিল তা ভাঙতে ২০১৭র এপ্রিলে শ্রীনগর কলেজের নারীরা রাস্তায় নেমেছিল। কাশ্মীরে ভারতের বিরুদ্ধে সহিংস বিক্ষোভ এতদিন যুবকদের একচেটিয়া ছিল। মেয়েরা তাদের স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই, স্কার্ফ মাথায়, এবং কেউ বা লম্বা পোশাকে পাথর হাতে ভারতীয় সেনাদের বাঙ্কার এবং সাঁজোয়া গাড়িগুলোকে তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছিল। টিয়ার গ্যাসের সেল, পিএভিএ-র সেল যেগুলো সাধারণত কাশ্মীরে বিক্ষোভ থামবার জন্য ব্যবহার করা হয়, তা দিয়েও সেদিন ওদের প্রতিহত করা যায় নি। হিজবুল মুজাহিদিনের তরুণ মিলিটেন্ট জাকির মুসা সেদিন মেয়েদের সতর্ক করে বলেছিল পাথর ছোঁড়া ছেড়ে দাও, তোমার ভাইয়েরা বেঁচে আছে"। সেই সর্তকতা সত্ত্বেও সেদিন মেয়েরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম, শ্রীনগর শহরের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন গলিতে সেদিন তারা নির্ভয়ে ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়েছিল। ২০১৮'র ৫মার্চ ইন্টারনেটে প্রকাশিত একটি ছবিতে একজন মিলিটেন্টের জানাজায় পুরুষদের পাশাপাশি দুজন নারীকেও দেখা গেছে। এটি এমন একটি দৃশ্য যা কাশ্মীরের বিপ্লবে নারীদের অংশগ্রহণ আরো নিশ্চিত করেছে। যা প্রমাণ করে একদিকে পিতৃতন্ত্র এবং অন্যদিকে সামরিক দখল উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে নারীদের সক্ষম করে তুলছে। ছবিটি কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, বরং কাশ্মীরে নারীদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দীর্ঘ ইতিহাসের ফসল।
      বোরখা পরিহিত কাশ্মীরি নারীদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে আত্মপ্রকাশ কাশ্মীরি নারীদের আরও এক নতুন স্ট্রাগেলের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে সবার প্রথমে যে নামটা উঠে আসে তা হল দুখতারান-ই-মিলাতর নাম। ১৯৮১সালে জামাত-ই-ইসলামির সাথে একাধিক বিষয়ে মতবিরোধের কারণে আসিয়া আনদ্ৰাবি দুখতারান-ই-মিলাতনামে একটি সম্পূর্ণ নারী সংগঠন তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন। প্রাথমিকভাবে সংগঠনটি নারীদের ইসলাম সম্পর্কে সচেতনতা তৈরীর দিকেই মনোনিবেশ করে। এরপর ১৯৮৭সালে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। এবং পুরুষের আধিপত্যের বাইরে এটি নিজেকে মূলধারার মুসলিম সংগঠনগুলির বিপরীতে একটি সমান্তরাল ও অপরিহার্য রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছিল। আসিয়াকে একজন রক্ষণশীল মুসলিম এবং উগ্র নারীবাদী হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু কাশ্মীরে ইসলামপন্থী নারীদের উত্থানের পেছনে লাগাতার সামরিক শাসন, অধিপত্যবাদ, ব্যাপক নির্যাতন, এবং তার ফলে তৈরী হওয়া ভয় এবং ক্রোধই যে অন্যতম কারণ সেটাও অনেকেই মনে করেন। আসিয়ার সংগঠন একদিকে যেমন বোরখা ব্যবস্থা কায়েম রাখার জন্য আন্দোলন করেছিল, আবার অন্যদিকে সেনা হেফাজতে কাশ্মীরিদের হত্যার প্রতিবাদে ধর্মঘটও ডেকেছিল। এমনকি আসিয়া আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশে তৈরী হওয়া জিনিসপত্র বয়কটেরও ডাক দেয়। দুখতারান-ই-মিলাতর কার্যক্রম 'দুখতারান-ই-তইবানামে আরও একটি সংগঠনের জন্ম দেয়ভারতের তরফ থেকে বলা হয় লস্কর-ই-তৈবা কাশ্মীরকে অশান্ত করে তুলবার জন্য ২১জন নারীকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর মুজাফরাবাদে জঙ্গী প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং দুখতারান-ই-তইবা' নামে একটি সংগঠন তৈরী করেছে কারণ তাদের তৈরী পুরনো সংগঠন দুখতারান-ই-মিলাতযে উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছিল তা তাদের আশা পূরণ করতে পারেনি। যাইহোক দুখতারান-ই-মিলাতবা 'দুখতারান-ই-তইবা' কী করতে পেরেছে বা কী কী করেছে সেটা বলা আমার উদ্দেশ্য নয়।আমি প্রথম থেকেই যে কথাটা আপনাদের বলার চেষ্টা করছি কাশ্মীরি নারীরা একটা দেশের রাষ্ট্রনীতি, দীর্ঘকালীন যুদ্ধ পরিস্থিতি, এবং দখলদারির কারণে কতভাবে আক্রান্ত এবং প্রতি মুহুর্তের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে গিয়ে তাদের মননের যে রূপান্তর ঘটে চলেছে তা বোধহয় আরও গভীরভাবে আমাদের পর্যালোচনা করার সময় এসেছে। এবং সেই খোঁজ শুরু করবার জন্য আসুন আমরা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পাশে দাঁড়াই, ভরসা যোগাই, বন্ধুর মত ওই মানুষগুলোর কাঁধে হাত রাখি। আসুন আমরা কাশ্মীরের সমস্ত শহীদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করি। ইনক্লাব জিন্দাবাদ...।






কবিতা
অনুবাদ : সোহেল ইসলাম

আমার বিরোধ

একটা রাস্তা,
একপাশে সূর্যোদয় হলে
অন্য পাশটায় সারি সারি গাছ
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে

আমরা এটুকুই চেয়েছি

অথচ,সেই রাস্তায় সেনা জিপ
আমাদের দুর্দশার ধুলো উড়িয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে
যার ড্রাইভারের
আগুন রঙে রাঙানো চুল

আমাদের বুকের মাঝ বরাবর একটা গর্ত
এফোঁড় ওফোঁড় করে গেছে
তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ ?
দেখতে পাচ্ছ –
আমাদের দুর্দশা,ইচ্ছেগুলোকে ?

আমিই সেই বিরোধী
জিজ্ঞাসা নিয়ে দাঁড়িয়েছি মুখোমুখি
বলে দাও
কীভাবে লুকাবো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ
কোথায় লুকাবো তোমাদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি?





নক্ষত্র পতন

কোত্থেকে আসে এত প্রতিশ্রুতি
আপনার কি কোনও আলমারি নেই
কিংবা ডাস্টবিন
যেখানে মিথ্যে গন্ধেভরা প্রতিশ্রুতিগুলো রাখা যায় ?

কারোর মন ভাঙলে
সেটা দেখার কোনও উপায় আছে আপনার ?
হতাশায়,কষ্টে
কারোর চোখ মুখ যখন কুঁচকে আসে,
তখন কী করেন আপনি
এবং আপনার প্রতিশ্রুতিরা ?

আপনার আর নক্ষত্র হওয়া হলো না
ওসব কিছুকে অনেক পেছনে ফেলে এসেছেন

অসম্পূর্ণতাকে ছুঁয়ে দেখার সাহস আপনার নেই
আমার আছে
কেননা
আজও আমার আঙুল বেঁধে থাকায় বিশ্বাস করে

যান,
আমার শব্দগুলোকে কাটুন,মুছুন
নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য
নিজের মত করে নিজের শব্দ বসিয়ে নিন
যা খুশি করুন
আমার কিচ্ছু যায় আসে না

আবার আমি ঠিক
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শব্দগুলোকে অনুভূতি দিয়ে জুড়ে নেব
চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় আর
নির্মমতার হিসেব গুনে রাখার জন্য






আমাদের জিততেই হবে

আমরা,
হ্যাঁ আমরাই,নিজেদের হৃদয়
নির্জনতার দেওয়ালে ঝুলিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি
কেননা দুর্গন্ধধরা জ্যাকবুটগুলো শহর দখল করে বসে আছে

আমরা জিতবই
আমাদের জিততেই হবে
আমরা,আমাদের বাচ্চাদের গড়ে তুলছি
ভালোবাসার সৈনিকের মত করে
অবিশ্বাসকে জিততে গেলে বিশ্বাসের একটা ঝোড়ো ইনিংস দরকার
এটুকু বয়সেই
ওরা বুঝতে শিখে গেছে

আমাদের যে জিততেই হবে
ব্যথা ছাড়া বর্ণনা করার মত কিছু নেই আমাদের
বুলেট বৃষ্টির বিরুদ্ধে
বুক পেতে দেওয়া ছাড়া আমাদের কোনও পরিচয় নেই

দেখে নিও
আমরা জিতবই
আল্লাকে সাক্ষী রেখে
ডাক দিয়েছি জয়ের
কালসিটে পিঠের চামড়া
ভাঙা পায়ের কসম
আমাদের জিততেই হবে

এই অতর্কিত হামলার বিরুদ্ধে
বন্দুকের নলের শাসনের বিরুদ্ধে
যদি হারাতে হয় চোখ
রক্ত ঝরাতে হয়,হোক
তবু আমাদের জিততেই হবে


10 comments:

  1. খুব ভালো অনুবাদ । লেখাগুলো হৃদয় ফুঁড়ে দেয় ।
    ধন্যবাদ সোহেল

    ReplyDelete
  2. সোহেল ধন্যবাদ তোমাকে এমন ভাল কিছু কবিতা পড়ানোর জন্য। ভীষণ ভাল অনুবাদ হয়েছে।

    ReplyDelete
  3. সাহস বাড়ল, ভালোবাসা

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো লাগলো। নতুন কিছু জানলাম। কবিতা গুলোও সাহসী ভাষায় লেখা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভালোবাসা নেবেন।লিংকটাও শেয়ার করুন তাহলে,আরও অনেকেই কাশ্মিরীদের লড়াই সংগ্রাম কবিতা সম্পর্কে জানতে ও পড়তে পারবে। আপনার মতামত অনেক সাহস বাড়াল

      Delete
  5. "নক্ষত্র পতন" ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  6. ভালোবাসা নেবেন,ভরসা ও সাহস বাড়ল

    ReplyDelete