বাক্‌ ১৪২ ।। প্রলয় মুখার্জি



শ্যামলালের বাগান

শান্ত এক পুকুরের উপর শ্যামলাল
স্থির ও জলের ভিতর অস্থির মাছ
মাছে লিলিফুল ক্রীড়া করে
মুখে তার পিতলের বঁড়শি
হাওয়ার অভিমুখে প্রায়ই ধায়
খেলার ছলে একে অপরকে তারা
তারা আয়ুর জালে একে অপরকে
টান দিয়ে আঁশগন্ধ মাঠে তোলে
মাঠেই দূর্বাঘাসের জননী
তার অতল জলে শ্যাওলা।
সূর্যালোক বলো বা সূর্যমুখী
জলের নীচে কিছুদিন
ডাঙার ওপর ক্ষণিক,
আয়ুর জালে একে অপরকেই টানি
কার মুখে বঁড়শির দাগ?
বুকে কার সার্জারি?



শ্যামলাল নিজস্ব জমিতে ঘাস কর্ষণ করে
তার সুপ্ত বাসনার কাছে মাটির কলস
কলসে অস্থি ভস্ম
সে করঞ্চের চারা বুনে দেবে কমলা পৃথিবীর ওপর, অস্থি ভস্ম দেবে দু আঁজলা
ইহলোকে কে আছে তার আষাঢ় ছাড়া?
দূরে দাঁড়িয়ে তার কন্যাসম তেঁতুলগাছ,        ঔষধের পাত্র হাতে একবার ডাকলেই বাবা!
সন্তান সম্ভবা কাঠবেড়ালি চেয়ে দেখে
বজ্রাঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত পেয়ারা চারাটির মুখে
নতুন অন্নের চেয়ে কচি দুটি পাতা।



নিষেধ সত্বেও শ্যামলাল জীবনকে বেচে দেয়নি
সে জীবনের ঘাড়ে লাঙল চালিয়ে জমি কর্ষণ করে না।
যদিও হৃৎপিন্ডে রক্ত আসা যাওয়ার নালী পথে একটি পিতলের রিঙ বসানো
যে টুকু ঝিঙে আর ফিঙে মাঠে আসে
এই
  পথেই
ঈষাণ কোনে সরস বেথো শাক জন্মায়
এই পথেই।

এই পথেই আসা যাওয়া দোয়েলের শিস!


বিঘা দুই জমির ওপর আঙুরক্ষেত,
দুটি ভালবাসায় মত্ত পাখি এসে খেয়ে যায়
স্কুল ছুট ভুঁই-কন্যা এসে খায়
পাশেই তার বনকলমীর জঙ্গল
তিতির পাখি লোভে লোভে ডেকে যায় কত পোকা- মাকড়,
বিঘা দুই আয়ুর ক্ষেতে শ্যামলাল একা একা
ঘাস কর্ষণ করে।
আঙুরের গোড়া বাঁধে দোঁয়াশ মাটিতে।


চিকিৎসক বলেছেন জমিখানি বেচে দিতে
ডোবার বুকে লিলিফুল
পাতায় পাতায়
  ধানি ব্যাঙ
স্ট্রবেরির চারা সহ বেচে দিতে
লাউডগার আগায় জমেছে যে মধু
অশ্বগন্ধার গায়ে ভগ্ন শিশির
বেচে ফিরে যেতে হবে বৃন্দাবন।
বৃন্দাবন তার চিকিৎসালয়
স্নায়ুর আরোগ্য লাভ হয়
ফিরে আসে প্রেম, হারানো স্মৃতি।
বুকের বাঁ-দিকে হাত রেখে শ্যামলাল বৃন্দাবনেই মারা গেল। শাদা চাদরে এসে বসেছিল বেথোশাক।
মৃত্যুর আগে সে স্নায়ুর ভিতর নকল বাগান
নকল পুকুর, শিশির রচনা করেছিল
ঘরের ভিতরই  সবুজ পুকুর, বন্ধ নিহারিকা
 ছিপ ফেলে মাছ ধরত।
কর্ষণ করত ঘাস।
ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছে শ্যামলাল,
আহা, বাগানের ভিতর বৃদ্ধ মোষ, ঈশান কোণে সরস বেথোশাক
শুকিয়ে মরল।
যদিও আঙুর গাছে ফুল এসেছিল দুটি, তিনটি।

2 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. কী ভালো লাগলো! গভীর হৃদয় থেকে উঠে আসা সাথে মেধাবী আয়োজন

    ReplyDelete