হাঁকামনা
অনির্বাণ
বসু
ধানসিড়ি
প্রকাশন
প্রথম
প্রকাশ : অক্টোবর ২০১৮
প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য
সাহিত্যে নিগূঢ় চর্চারত কোনও ব্যক্তি যখন কলম ধরবে বলে মনস্থ করেন, তখন তার পরিণতিগুলির মধ্যে একটা সম্ভাবনা
নেগেটিভের দিকেও এগোয়; বিভিন্ন টেকনিকের ব্যবহার ছাপিয়ে মূল
প্লটকে অনুধাবন করা হয়ে দাঁড়ায় প্রায় চ্যালেঞ্জের মতো। এখানেই সম্ভবত অ্যাসিড
টেস্ট কার আঙুলে সময় নতজানু হবে আর কোন নির্মাণটি হারিয়ে যাবে কালখণ্ডে। অনির্বাণ
তাঁর "হাঁকামনা" উপন্যাসে যে অনায়াস দক্ষতায় প্রায় আড়াইশো বছরের এক
মেধাবী আত্মঘাতী জনজাতির ইতিহাসকে অবিশ্বাস্য ঘন প্লট আর দ্রুতগতির নির্মেদ গদ্যে
বুনেছেন তাতে "হাঁকামনা"-কে এই সময়ের বাংলা
সাহিত্যে অন্যতম দিক নির্ণায়ক লেখনী বললে অত্যুক্তি করা হয় না। লক্ষণীয়, এই ইতিহাস সর্বস্বীকৃত পরিভাষা তথা প্রথাগত ক্রনোলজির অনুসারী হয়নি,
একরৈখিক কোনও সীমাবদ্ধতার দায় তার নেই। এক মাতৃহীন সন্তান প্রায়
জাতিস্মরের নির্লিপ্ত দর্শনে সমগ্র সময়টায় নিজেকে খুঁজেছে; তার
এই আত্মানুসন্ধান স্যুরিয়াল থেকে নার্সিসিস্টিক, কখনও
ডিকনস্ট্রাকটিভও বটে। অক্ষেরও পরিবর্তন
হয়েছে। সমস্ত নারী যে আদতে একই শক্তি বা দুর্বলতা স্তম্ভের
বিভিন্ন রূপ কোনও পুরুষের অবচেতনে, এই সত্যকে
"হাঁকামনা" স্নায়ুতে বিদ্যুৎপ্রবাহের মতোই বারবার সঞ্চারিত করে।
অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের সূক্ষ্ম সুতোটি যে আদতেই হিম আতঙ্কের তা নামকরণ থেকে শুরু
করে প্রতিক্ষণের 'নিউ নর্মাল'-এর সঙ্গে
সংঘাতে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর করা হয়েছে। কখনও সেই আতঙ্কের এপিসেন্টার রাষ্ট্র, কখনও অন্তর্গত সংরাগ। "হাঁকামনা"-কে
বাকি দশটা সরল বাংলা গল্পের আলস্যে উদরীভূত করা যায় না। এটি একদিকে যেমন
কমলকুমার-পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খরাপ্রবণ এক সময়াংশকে রীতিমতো সংকটের
মুখে ফেলে, তেমনই পাঠক হয়ে ওঠাটাও যে একটা অনুশীলন, তাকে নিশ্চিত করে। শব্দসংখ্যা সাহিত্যের যে-কোনও আঙ্গিকে হাস্যকর একটি
সূচকমাত্র, অনির্বাণ তা নিয়ে সংশয়ের সুযোগমাত্র রাখেননি। ফলত
প্রথম পাতার উৎসর্গ থেকে শুরু করে শেষের ঋণতালিকা অবধি কোনও ডাইলিউটেড পথ্য পাঠকের
গিলে নেওয়ার কোনও অবকাশ থাকে না। "হাঁকামনা"
প্রশ্নবিদ্ধ করে। সময়-রাষ্ট্র-সত্তা-ব্যক্তি-বোধ-নীতি প্রতিটি প্রচলিত ধারণাকে
বহুমাত্রিক ইতিহাসে তাদের অবস্থানের ব্যাখ্যান সহ আর তা অত্যন্ত দৃঢ় উচ্চারণে।
এটিই তার সাফল্য। ব্যর্থতা হিসাবে বাজারচলতি বিনোদন পত্রিকা-গ্রাহকের খোরাক না-হতে
পারার প্রসঙ্গ আনা যেত কিন্তু সেক্ষেত্রে এই কলম থেকে ভবিষ্যতের দাবিগুলিকে
অসম্মান করা হয়, তাই সে-আলোচনা থাক। বিনয় অথবা নবারুণ যে
দ্রোহের উত্তরাধিকার দেখলে স্বস্তি পেতে পারতেন, সম্ভবত
"হাঁকামনা" তার সামগ্রিক উপস্থাপনা ও বিষয়নৈপুণ্য নিয়ে
সেই স্থলাভিষিক্ত হল।
আলোচনা পড়ে বইটা পড়ব এবার। ভালো লাগল।
ReplyDeleteতোমার অতি অবশ্যই এটা পড়ার কথা
Deleteউঁচু মানের আলোচনা ।
ReplyDeleteধন্যবাদ
Delete'বিনয় বা নবারুণ....'
ReplyDeleteএরপর বইটা অবশ্যই পড়তে হবে। দেখা যাক কবে পড়ি!
অনির্বাণের প্রতিটি বইই মূল্যবান। আমি শুধুমাত্র একটা নিয়ে আলোচনা করলাম। কিন্তু এই বিশেষণটা ওর সব বই-এর ক্ষেত্রেই আসবে।
Deleteআলোচনা পড়ে বইটার প্রতি তীব্র আকর্ষণ জেগেছে। সুযোগ হলে সংগ্রহ করে পড়ার ইচ্ছা রইলো।
ReplyDelete'ধানসিঁড়ি'র বই বাংলাদেশে সহজেই পাওয়া যায়, দেখো।
Deleteখুব সুন্দর আলোচনা । বইটা সংগ্রহে আছে, তবে এখনও পড়া হয়নি । পড়ব । তোমার আলোচনাটা তার আগেই পড়ে ফেললাম ।
ReplyDelete।। শুভদীপ নায়ক ।।
তুমি আলোচনা করলে অন্য মাত্রা পাবে।
Delete